মঙ্গলবার, ৯ আগস্ট, ২০১১

রামদা উঁচিয়ে শিক্ষকদের তাড়া করল ছাত্রলীগ

ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দুই ছাত্রকে পুলিশে সোপর্দ করায় ক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসে তাণ্ডব চালিয়েছে। সংগঠনের সদস্যরা গতকাল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর এবং শিক্ষকদের ওপর চড়াও হয়। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা রামদা, রড ও লাঠিসোঁটা নিয়ে শিক্ষকদের ধাওয়া করে। হামলায় কমপক্ষে ২০ শিক্ষক আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে গুরুতর আহত একজনকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শিক্ষক সমিতি এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করে আজ মঙ্গলবার থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।
বাকৃবির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় ছিনতাই করার অভিযোগে গত রবিবার বিকেলে নিরাপত্তাকর্মীরা দুই ছাত্রকে আটক করেন। তারা হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হলের আবাসিক ছাত্র নূর মোহাম্মদ ও ফজুলল হক হলের আবাসিক ছাত্র আরিফ। এই দুই শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি শামসুদ্দিন আল আজাদের সমর্থক বলে জানা গেছে। তারা আটক হওয়ার পর প্রক্টর আবু হাদী নূর আলী খানের নির্দেশে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয় তাদের। এরপর রাতে ছাত্রলীগের সভাপতির সমর্থক নেতা-কর্মীরা প্রক্টরের গাড়ি ভাঙচুর ও তাঁর বাসায় গিয়ে গালাগাল করে।
প্রক্টরের সঙ্গে এমন আচরণের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি গতকাল দুপুর ১২টার দিকে মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের গ্যালারিতে জরুরি সভা করে। পরে দুপুর ১টার দিকে ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে মৌন মিছিল বের করেন শিক্ষকরা। মিছিল চলার সময়
ক্যাম্পাসের জব্বারের মোড়ে ছাত্রলীগের কিছু কর্মী শিক্ষকদের কটূক্তি করে। এতে কয়েকজন শিক্ষক ক্ষিপ্ত হয়ে চারজন শিক্ষার্থীকে জামার কলার ধরে টেনে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যান। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূর আলম, হাবিব, রাসেল ও তপু নামের ওই চার ছাত্রলীগ কর্মীকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা প্রক্টর কার্যালয়ের সামনে শিক্ষকদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। তাদের সঙ্গে কয়েকজন শিক্ষকের হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা রামদা, রড ও লাঠিসোঁটা নিয়ে শিক্ষকদের ধাওয়া করে এবং ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। ছাত্রলীগের হামলায় অন্তত ২০ জন শিক্ষক আহত হন বলে শিক্ষক সমিতি দাবি করেছে। ইটের আঘাতে পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সুবাস চন্দ্র দাস মারাত্মক আহত হন। তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা প্রক্টর কার্যালয়, ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টার কার্যালয়, টিএসসি, প্রশাসন ভবন, কৃষি অনুষদ ভবন ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু স্থাপনায় ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্রাবাস ও শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ব্যবহৃত কয়েকটি মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করে। দুটি মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
হামলার পর শিক্ষক সমিতির নেতারা উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এ সাত্তার মণ্ডলের সঙ্গে বৈঠক করেন। শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, 'গত রবিবার রাতে প্রক্টরের গাড়ি ভাঙচুর ও বাসায় হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষক সমিতি অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করার ঘোষণা দিয়েছে। এ ছাড়া সমিতি উপাচার্যের কাছে আজ (সোমবার) শিক্ষকদের ওপর বর্বরোচিত হামলায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। আগামীকাল (মঙ্গলবার) সকাল ১১টায় দায়ীদের বিচার করা না হলে দুপুরে শিক্ষক সমিতি জরুরি সভা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক কালের কণ্ঠকে জানান, তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করার জন্য উপাচার্যের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু নিজের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কায় উপাচার্য তাতে রাজি হননি।
শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সন্ধ্যায় ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন উপাচার্য। এর পর পরই পুলিশ শিক্ষকদের কটূক্তি করার অভিযোগে আটক করা চার ছাত্র নূর আলম, হাবিব, রাসেল ও তপুকে ছেড়ে দেয়। উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠকের আগে ছাত্রলীগ সভাপতি শামসুদ্দিন আল আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, 'ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িতদের বিচার আমরাও চেয়েছি। ওই ব্যাপারে প্রশাসনের সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। তবে আজ (সোমবার) শিক্ষকরা যেভাবে সাধারণ ছাত্রদের মারধর ও টানাহেঁচড়া করেছেন সেটি নিন্দনীয়। আমরা এর বিচার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা, শিক্ষক সমিতির সভাপতির পদত্যাগ চাই। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের দাবি না মানলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করবে।'
কোতোয়ালি থানার ওসি গোলাম সরোয়ার রাতে কালের কণ্ঠকে জানান, রবিবার গ্রেপ্তার করা দুই ছাত্রকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া অন্য চার শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতিক্রমে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্যাম্পাসে প্রায় দেড় শ পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।
ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আবু হাদী নূর আলী খান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। অন্যদিকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এ সাত্তার মণ্ডলের মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। (কালেরকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ 9/8/2011)

রবিবার, ৭ আগস্ট, ২০১১

ঐতিহ্য ও সম্ভবনাময় সান্তাহার

১. ভূমিকা:
বাংলাদেশের প্রাচীনতম থানাগুলোর মধ্যে অন্যতম থানা আদমদীঘি। এই থানার একমাত্র পৌর ও জংশন শহর হিসাবে সান্তাহারের ঐতিহ্য ও গুরুত্ব প্রায় ১৩০ বছরের অধিক সময় ধরে বাংলাদেশব্যাপি বিস্তৃত। বৃটিশ সরকারের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের সুবিধার্থে ১৮২১ খৃষ্টাব্দে আদমদীঘি থানা রাজশাহী জেলা হতে পৃথক হয়ে নবগঠিত বগুড়া জেলার সাথে একীভূত করা হয়। উল্লেখ্য, তৎকালীন সময়ে পার্শ্ববর্তী নওগাঁ সদর থানা তথা নওগাঁ জেলার কোন অস্তিত্ব ছিলনা। বর্তমানে নওগাঁ সদর থানার সুলতানপুর, পার-নওগাঁ, তিলকপুর ইউনিয়ন এবং জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর ইউনিয়ন আদমদীঘি থানার অর্ন্তগত ছিল বলে বিভিন্ন সরকারী দলিলপত্র হতে জানা গেছে।

২. সান্তাহার নাম করণ:
সান্তাহার রেল জংশন ষ্টেশনের সরকারী কোড STU। অনুসন্ধানে জানা গেছে তৎকালীন আদমদীঘি থানাধীন সুলতানপুর বাজার (বর্তমানে নওগাঁ জেলার সদর থানাধীন) অত্র এলাকার বিখ্যাত ও প্রসিদ্ধ বাজার হিসাবে গড়ে উঠায় অত্র রেল ষ্টেশনের নাম সুলতানপুর রাখা হয়। সেই হিসাবে SULTANPUR ইংরেজী নাম হতে S T U নিয়ে সান্তাহার রেলওয়ে জংশন ষ্টেশনের কোড STU নির্ধারণ করা হয়। যা এখন পর্যন্ত বহাল আছে। যেমন: NATOR ইংরেজী নাম হতে N T R নিয়ে নাটোর রেলওয়ে ষ্টেশনের কোড NTR অনুরুপভাবে RAJSHAHI ইংরেজী নাম হতে R A J নিয়ে রাজশাহী রেলওয়ে ষ্টেশনের কোড RAJ নির্ধারণ করা হয়। এইভাবে সংশ্লিষ্ট এলাকার নামানুসারে রেল ষ্টেশনের কোড নাম সমূহের সামঞ্জস্য দেখা গেলেও Santahar (সান্তাহার) নামের বানানের সাথে কোড-এর কোন মিল দেখা যায় না। তাই, সান্তাহারের আদি নাম যে সুলতানপুর তার প্রমান বহন করে।
অত্র জংশন শ্টেশনটি সাতাঁহার মৌজার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় স্থানীভাবে সাতাঁহার নামই পরিচিত হতে থাকে। সাতাঁহারের ইংরেজী বানান Santahar কালক্রমে ব্যাপকভাবে সান্তাহার নামে পরিচিতি হওয়ায় সুলতানপুর নামটি বিলুপ্ত হয়। ১৯৪৭ খৃষ্টাব্দে বৃটিশ উপনিবেশ শেষ হলে সুলতানপুর নামটি পুরোপুরি বিলুপ্ত হয় এবং সরকারী ভাবে সান্তাহার নামটি ব্যবহার শুরু হয়। তবে, সান্তাহার রেল ষ্টেশনের কোড STU রয়ে যায়। উল্লেখ্য, বাংলা ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে কোন শব্দের সাথে চন্দ্রবিন্দু থাকার কারণে ইংরেজী বানানের সময় চন্দ্রবিন্দু এর স্থলে ইংরেজী বর্ণ N ব্যবহারের নিয়ম রয়েছে। এই নিয়মানুসারে ‍‍নওগাঁ এর ইংরেজী বানান দাড়াঁয় Naogaon । তাই বাংলা সাতাঁহার এর ইংরেজী অপভ্রংশ Santahar নামটি অধিক ব্যবহারের কারণে সান্তাহার নামটি ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করে।

৩. গঠন ও বিস্তার:
১৮২১ খৃষ্টাব্দের পূর্বে কোন এক সময় আদমদীঘি, থানা হিসাবে এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এই সময়ে সান্তাহার একটি প্রত্যন্ত অঞ্চল হিসাবে ঝোপঝাড়ে আচ্ছন্ন ছিল। বর্তমানে সান্তাহারের পশ্চিমাংশের নওগাঁ জেলাধীন সুলতানপুর আদমদিঘী থানার অন্তর্গত ছিল। চাল এবং ইংরেজ বণিকদের রেশম কেনাবেচার জন্য বর্তমানে নওগাঁ সদর থানাধীন সুলতান বাজার যাথেষ্ট প্রসিদ্ধ ছিল। এই বাজারে আসা যাওয়ার জন্য আদমদিঘী ও দুপচাচিয়া অঞ্চলের ব্যবসায়ীগণ বর্তমানে সান্তাহারের উপরদিয়ে সুলতানপুরে যাতায়াত এর কারণে সান্তাহারে ক্ষীণকায় বসতি গড়ে উঠে। ১৮৭৪-৭৫ খৃষ্টাব্দে নর্দার্ণ বেঙ্গল রেলপথের কাজ শুরু হয় এবং ১৮৭৯ খৃষ্টাব্দে নর্দার্ণ বেঙ্গল রেলপথ চালু হওয়ার সাথে সাথে সান্তাহারে রেলষ্টেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সময় নওগাঁ, বান্দাইখাড়া থানাধীন (বর্তমানে নওগাঁজেলাধীন আত্রাই উপজেলার একটি বাজার) ছোট নৌ-বন্দর ছিল। কলকতার সাথে ব্রডগেজ এবং ঢাকার সাথে মিটারগেজ যোগাযোগের মিলনস্থল হিসাবে সান্তাহার উনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধেই ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে এবং এর গুরুত্ব উত্তোরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। সান্তাহার শহরটি মুলত: রেলজংশনকে কেন্দ্র করে গঠিত হওয়ায় রেলের প্রসার বৃদ্ধির সাথে সাথে সান্তাহারের গুরুত্ব ও ব্যাপ্তি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমানে সান্তাহার পৌর শহর ও ইউনিয় প্রায় ৩১ বর্গকিলোমিটার ব্যাপি বিস্তৃত। মোট জনসংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার জন। সান্তাহারের অতিব গুরুত্বপুর্ণ সরকারী স্থাপনা সমূহ যথাক্রমে: সান্তাহার পৌরসভা, প্রথমশ্রেনীর সান্তাহার রেলওয়ে জংশন ষ্টেশন, ২৯১৫০ মে:টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন সি.এস.ডি খাদ্যগুদাম, ৩০০০ মে:টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন বিএডিসি খাদ্য গুদাম, সাইলো (বাংলাদেশে মাত্র ৪ টি সাইলোর মধ্যে সান্তাহারে অবস্থিত একটি), প্লাবনভুমি মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট (বাংলাদেশে মাত্র ৩ টির মধ্যে সান্তাহারে অবস্থিত একটি) বাফার সার গুদাম, সান্তাহার কাষ্টমস গুদাম, বাংলাদেশের বৃহত্তম রেল ইয়ার্ড, সান্তাহারের সন্নিকটে আঞ্চলিক হাঁসপ্রজণন খামার, টাউন পুলিশ ফাঁড়ি, ষোল শহর বিদ্যূত উন্নয়ন প্রকল্প, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কারখানা, রেলওয়ে হাসপাতাল, সান্তাহার সরকারী কলেজ প্রভৃতি। বর্তমানে ২০ শয্যা বিশিষ্ট্ আধুনিক হাসপাতালের নির্মাণকাজ শেষ হলেও অজ্ঞাত কারণে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়নি। তাছাড়া, ৫০ মেগাওয়াট সম্পন্ন বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে।

৪.নবীনা সান্তাহার:
শহর হিসাবে সান্তাহারের শুভযাত্রা বলতে গেলে ১৮৭৯ তে সান্তাহারে রেল ষ্টেশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে। রেলের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার কারণে এখানে রেলওয়ের বড় বড় স্থাপনা প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। এখানে বাংলাদেশের সর্ববৃহত রেল ইয়ার্ড প্রতিষ্ঠিত হয়। লোকোসেড সহ বিভিন্ন স্থাপনা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কারণে এইসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মী- কর্মকর্তাদের আবাসিক সুবিধা দানের জন্য বিভিন্ন কলোনী (সাহেবপাড়া, ষ্টেশন কলোনী, ইয়ার্ড কলোনী, লোকোকলোনী, ড্রাইভার কলোনী প্রভৃতি) প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং সাথে সাথে সান্তাহারের ব্যপ্তি ও সৌন্দর্য্য বহুগুণে বৃদ্ধি পেতে থাকে। সান্তাহার রেলওয়ের সকল এলাকায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের জন্য রেলওয়ের নিজস্ব উদ্যোগে পাওয়ার প্ল্যান্ট সহ পানি ও পয় নিস্কাশনের আধুনিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়। রেলওয়েতে চাকুরীরর কারণে এবং সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ১৯৪৭ এর পর হতে এখানে ব্যাপক সংখ্যক অবাঙ্গালীদের আবাসস্থল গড়ে উঠতে দেখা গেছে। ১৯৭১ খৃষ্টাব্দে স্বাধীনতা যুদ্ধে সান্তাহারের অবাঙ্গালীগণ দেশের অন্যান্য এলাকার মত আত্মসমর্পণ করে এবং কিছু সংখ্যক অবাঙ্গালী আত্মরক্ষার জন্য পালিয়ে যায়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সড়ক পথের উত্তোরোত্তর উন্নয়নের ফলে রেল কেন্দ্রীক শহর সান্তাহারের গুরুত্ব মলিন হলেও ১৯৮৮ খৃষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত সান্তাহার পৌরসভা এ শহরের শ্রী বৃদ্ধি অব্যাহত রাখে।

৫. সম্ভবনাময় সান্তাহার:
ক) নিম্নবর্ণিত সুবিধার কারণে সান্তাহারে Export Processing Zone (EPZ) স্থাপন করা যেতে পারে।
- রেলপথে খুলনা হয়ে মংলা সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা।
- সড়ক পথে ঢাকা, চট্রগ্রাম সহ দেশের সকল স্থানের সাথে নিরবিচ্ছিন্ন সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা।
-রেলওয়ের বিপুল পরিমান পরিত্যক্ত ভুমি হতে EPZ স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জমি সংস্থানের সহজ সুযোগ।
- স্থানীয় উদ্যোক্তার সহজলভ্যতা
- তুলনামুলক মজুরী কম এবং প্রয়োজনীয় শ্রমিকের সহজলভ্যতা
খ) সান্তাহার সরকারী কলেজকে মাষ্টারস শ্রেনী পর্যন্ত উন্নীতকরণ।
গ) নিমার্ণাধীন সান্তাহার-নাটোর মহাসড়কটি ভুটান ও নেপালের ট্রানজিট রুপ হিসাবে ব্যবহার করা। উল্লেখ্য, বর্তমানে ঘোষিত রুটের তুলনায় এই রুটে প্রায় ২০০ কি.মি পথ সাশ্রয় হবে।
ঘ) ঐতিহাসিক রক্তদহ বিল সংস্কারের মাধ্যমে স্থানীয় জীব বৈচিত্র রক্ষা সহ দেশী প্রজাতীর মৎস্য চাষ বৃদ্ধি করা এবং অত্র এলাকার নৌ-পথ ব্যবস্থা পুন:জীবিত করা।
ঙ) সান্তাহার শহরের প্রান কেন্দ্রে অবস্থিত রেলগেট সান্তাহার শহরকে পুর্ব ও পশ্চিম দুইভাগে বিভক্ত করে রেখেছে। অত্র রেলগেটে ফ্লাইওভার নির্মাণ করে পুর্ব ও পশ্চিম অংশকে একত্রিত করা।

৬. উপসংহার:
প্রায় ১৩০ বছর ব্যাপি সান্তাহার শহরের ব্যপ্তি বৃদ্ধি পেলেও থানা তথা উপজেলার সকল ধরণের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকা সত্বেও সান্তাহার উপজেলার দাবীটি এখানো স্বীকৃত হয়নি। তথাপি, সান্তাহারের ঐতিহ্য ও গুরুত্ব স্ব-মহিমায় উজ্জল হয়ে দেশব্যাপি আলোকদ্যুতি ছড়িয়ে দেয়ার ব্রত পালন করে চলেছে।

কম খান, সব ঠিক হয়ে যাবে: বাণিজ্যমন্ত্রী

বাণিজ্যমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেছেন, কম খান, সব ঠিক হয়ে যাবে। তিনি বলেন, খাবারের প্রতি লালসা কমান- তাহলে ব্যবসায়ীদের উচিৎ শিক্ষা হবে। সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ভলেন্টারি কনজুমারস ট্রেনিং এন্ড অ্যাওয়ারনেস সোসাইটি (ভোক্তা) আয়োজিত ‘খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, যতটুকু খাওয়া প্রয়োজন তার চেয়ে কম খেলে শরীর ভালো থাকবে। ভেজাল সমস্যারও সমাধান হবে।





(মানবজমিন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ)

দেশ ভালো চলছে না: প্রধানমন্ত্রীর ইফতারে কাদের সিদ্দিকী

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, ‘দেশ ভালো চলছে না। কোথাও স্বস্তি, শান্তি ও স্থিতি নেই।’

শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে তার সরকারি বাসভবন ‘গণভবনে’ আয়োজিত ইফতার মাহফিলে শরিক হওয়ার পর চলে যাওয়ার সময়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

‘এ পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের উপায় কি’ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,  ‘উপায় হচ্ছে সদিচ্ছা, পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ ও সমঝোতা।’

মহাজোটে যোগ দিচ্ছেন কি না জানতে চাইলে বঙ্গবীর পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘আমার নৌকা কি ডুবে গেছে নাকি যে অন্যের নৌকায় লাফ দিয়ে উঠবো? তবে দেশের এরকম একটি পরিস্থিতিতে যে দেশ চালাচ্ছেন তাতে প্রধানমন্ত্রীকে আমি যোগ্য বলেই মনে করি।’

মহাজোটে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী কিছু বলেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইফতার মাহফিলে এসেছি। এ পরিস্থিতিতে তিনি ওই বিষয় নিয়ে কিছু বলবেন তা আশা করি না। পরে হয়তো এ ব্যাপারে আলোচনা হবে।’

তিনি বলেন, ‘রোজা-রমজানের অনুষ্ঠানে একজন মুসলমানের সঙ্গে যে কথা হয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও সেই কথাই হয়েছে।’

রাজনৈতিক কোন কথাবার্তা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা আগে একই দলের লোক ছিলাম। আর শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার ভাই-বোনের সম্পর্ক। প্রধানমন্ত্রী আমার কুশল জানতে চেয়েছেন, আমিও চেয়েছি।’


প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবীর আরো বলেন, ‘বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে পৌণে দু’ঘণ্টা কথা বলেছি। তাই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পৌণে এক ঘণ্টা হলেও আলোচনা হবে।’ (Source: banglanews24.com)